প্রকাশ: ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২১, ১১:৫৭ এএম
সৈয়দপুরে রসুলপুর রেলওয়ের কর্মচারী নুর মোহাম্মদ। তিনি কোয়ার্টারে স্ত্রী-সন্তানসহ প্রায় ছয় বছর থেকে বসবাস করে আসছেন। গত বছরের ৩ এপ্রিল ঘটনার দিন শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে তার মেয়ে আট বছরের নুরানি আক্তার নূপুর ও তার ছোট ছেলে সাত বছরের আবু সোহানসহ খাওয়া শেষে তাদের কোয়ার্টারের উত্তর দিকের ঘরে গল্প করছিলেন। এমন সময় তার ছেলে ও মেয়ের মধ্যে ঝগড়া শুরু হয়। এ নিয়ে নুর মোহাম্মদ তার ছেলে-মেয়েকে বকাঝকা করেন এবং মেয়েকে নিয়ে পাশের ঘরে টিভি দেখতে আসেন। মেয়ে নূপুর টিভি দেখছিল এবং নুর মোহাম্ম্দ তার ব্যবহৃত অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোনে নাটক দেখছিলেন।
কিছুক্ষণ পর নূপুর তার বাবার কাছে মোবাইল ফোনটি চায়। নুর মোহাম্মদ মেয়েকে ফোন না দিয়ে ধমক দেন। এরপরও নুপুর মোবাইল ফোনের জন্য জেদাজেদির একপর্যায়ে তার বাবাকে ‘কুত্তার বাচ্চা’ বলে গালি দেয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে নুর মোহাম্মদ নূপুরের গলা চেপে ধরেন। কিছুক্ষণ পর শিশুটি নিস্তেজ হয়ে পড়ে এবং সেখানেই মারা যায়। মেয়ের মৃত্যু হলে ঘাতক পিতা ঘরের মধ্যে কাপড় শুকানোর রশিতে নূপুরের লেহেঙ্গার ওড়না বেঁধে ঝুলিয়ে রেখে আত্মহত্যা বলে প্রচার করেন।
আরো পড়ুন:মানিকগঞ্জে ধর্ষণের ভিডিও করেন দুলাভাই, ভিডিও ফাঁস করেন বোন!
এভাবেই পিবিআইয়ের কাছে মেয়ে হত্যার বর্ণনা দেন ঘাতক পিতা নুর মোহাম্মদ। তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার মাত্র ১১ দিনের মাথায় রংপুর পিবিআই এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনে সক্ষম হয়। আজ শনিবার দুপুরে রংপুর পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার জাকির হোসেন এই তথ্য জানান।
আরো পড়ুন: এবার মিলল আরেক মিন্নির খোঁজ, ধ্বংস “প্রেমিকদের” পরিবার
প্রথমে নীলফামারীর সৈয়দপুর থানা পুলিশ এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যু মামলা করে। শিশুটির ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর জানা গেছে, তাকে শ্বাস রোধ করে হত্যা করা হয়েছে। এরপর পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামি করে হত্যা মামলা করে। দীর্ঘ ১০ মাস তদন্ত করে রহস্য উদ্ঘাটনে ব্যর্থ হয়ে তদন্ত কর্মকর্তা মামলাটি পিবিআইকে হস্তান্তরের জন্য আদালতে আবেদন করেন।
আরো পড়ুন: বড় মেয়ের চিকিৎসার খরচ যোগাতে ছোট মেয়েকে বিক্রি
নীলফামারী আমলি আদালত সৈয়দপুর-২ মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআই রংপুর জেলার ওপর অর্পণ করেন। পিবিআই তদন্তভার গ্রহণ করে এসআই নুরে আলম সিদ্দিকের ওপর তদন্তভার দেয়। তদন্ত কর্মকর্তা মামলাসংশ্লিষ্ট আলামত হিসেবে একটি নীল রংয়ের লেহেঙ্গার ওড়না জব্দ করে। পুলিশ সুপার এ বি এম জাকির হোসেনসহ পিবিআইয়ের একটি টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। ঘটনার পারিপার্শ্বিকতায় ও আলামত ওড়নায় দেওয়া গিট দেখে পিবিআই পুলিশের সন্দেহ হয়। এরপর শিশুটির পিতা নুর মোহাম্মদকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গত বৃহস্পতিবার পিবিআই অফিস রংপুরে নিয়ে আসা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে নুর মোহাম্মদ মেয়েকে হত্যার কথা স্বীকার করে বিস্তারিত বর্ণণা দেন। শুক্রবার বিকেলে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ার পর তাকে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়। নুর মোহাম্মদ ঠাকুরগাঁও জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার মুক্তিাযোদ্ধা পাড়ার খয়রাত আলীর ছেলে।