ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগরে প্রাইভেট পড়ানোর সময় এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে স্কুলের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে। যৌন হয়রানির ওই ভিডিও চিত্র সোল্যাল মিডিয়া ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। এ ঘটনায় ওই শিক্ষকের শাস্তি চেয়ে প্রধান শিক্ষক বরাবর আবেদন করেছে স্কুলের শিক্ষার্থীরা। ঘটনার সত্যতা পেয়েছে তদন্ত কমিটি।
সম্প্রতি উপজেলার সলিমগঞ্জ এ আর এম উচ্চ বিদ্যালয়ের শরীর চর্চা বিভাগের শিক্ষক মো. আল-আমিনের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ আনে শিক্ষার্থীরা।
অভিযোগ পাওয়ার পর ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। ঘটনার বিষয়ে তদন্ত কমিটির প্রধান সিনিয়র শিক্ষক আবুল হোসেন সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘ঘটনার সময় ওই ছাত্রীর সঙ্গে যেসব শিক্ষার্থী প্রাইভেট পড়ছিল তাদের সঙ্গে ও অভিযুক্ত শিক্ষকের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ভিডিও চিত্র পর্যালোচনা করা হয়েছে। তদন্তে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে। আমরা ইতোমধ্যে প্রতিবেদন জমা দিয়েছি।’
স্থানীয় ব্যক্তি, স্কুলের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অভিযুক্ত শিক্ষক আল-আমিন ২০১৩ সালে সলিমগঞ্জ এ আর এম উচ্চ বিদ্যালয়ে শরীরচর্চা শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান। তখন থেকে বিভিন্ন বাড়িতে বাসাভাড়া নিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়াতেন। সম্প্রতি হাইস্কুল সংলগ্ন নাজিম উদ্দিনের বাড়িতে দুটি রুম ভাড়া নিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়ানো শুরু করেন।
গত ২৫ ফেব্রুয়ারি সকালে যথারীতি প্রাইভেট পড়ার সময় টেবিলের নিচ দিয়ে এক ছাত্রীর উরুতে স্পর্শ করেন। ওই ছাত্রী বার বার হাত সরিয়ে দিলেও তিনি একই কাজ করতে থাকেন। সেই সময় এক শিক্ষার্থী বিষয়টি টের পেয়ে গোপনে টেবিলের নিচ দিয়ে দৃশ্যটি ভিডিও চিত্র ধারণ করেন। ঘটনার পরদিন সকালে অভিযোগ দেয় শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে তিন সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়।
শিক্ষার্থীরা সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছে, শিক্ষক আল-আমিন প্রাইভেট পড়ানোর সময় তার পাশে কোনো ছেলে ছাত্রকে বসতে দিতেন না। বরাবরই ছাত্রীদের তার পাশে বসিয়ে পড়াতেন।
তার বিরুদ্ধে অন্য ছাত্রীদের সঙ্গেও যৌন হয়রানির অভিযোগ রয়েছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে অভিযুক্ত শিক্ষক আল-আমীন বলেন, ‘আসলে ভাই কি বলব, বলার ভাষা নেই। আমি মরে গেছি। ঘটনার সত্য-মিথ্যা কিছুই বলব না। কমিটির কাছ থেকে আমি এক মাসের সময় নিয়েছি বোঝাপড়ার জন্য।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্কুলের বিক্ষুব্ধ কয়েকজন শিক্ষার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করে সংবাদ মাধ্যমকে বলে, বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটি ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনগত কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। বরং ওই শিক্ষকের নিজ ইচ্ছায় চাকরি ছেড়ে দিয়ে চলে যাওয়ার আবেদন অনুমোদন করেছে। এ ঘটনা তাদের ব্যথিত করেছে।
ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা স্বীকার করে স্কুলের প্রধান শিক্ষক আহম্মদ আলী বলেন, ‘আমরা বিষয়টি নিয়ে সভা করেছি। স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটির ওই সভায় অভিযুক্ত শিক্ষক স্কুল থেকে চাকরি ছেড়ে দিয়ে চলে যাবেন মর্মে কমিটির সভাপতি বরাবর একটি লিখিত আবেদন দিয়ে এক মাসের সময় চেয়েছেন।’
এ বিষয়ে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মোশারফ হোসেন বলেন, ‘চাকরি থেকে অব্যাহতি, এটাও একটি শাস্তি। আসলে বিষয়টি স্কুলের মানসম্মানের দিক বিবেচনায় করে করা হয়েছে। এরই মাঝে যদি সে চলে না যায়, তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোকাররম হোসেন সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, বিষয়টি খুবই ন্যক্কারজনক ও নিন্দনীয়। স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটি তাকে অব্যাহতি দেয়ার ব্যবস্থা নিয়েছে বলে শুনেছি।