প্রকাশ: ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২১, ০৩:৫৬ পিএম
মেহেরপুর জেলার মুজিবনগরে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা থেকে নাম বাদ পড়েছে এক মুক্তিযোদ্ধার। সেই শোকে জামাত আলী (৬৫) নামে একজনের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে তার পরিবার। জামাত আলী গত বুধবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) সকালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে নিজ বাসভবনে ইন্তেকাল করেন। পরিবারের অভিযোগ করেছে, সম্প্রতি মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাইয়ের সময় সাক্ষী দেখাতে না পারায় প্রাথমিক পর্যায়ে জামাত আলীর নাম তালিকা থেকে বাতিল করে দেয় উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা যাচাইবাছাই কমিটি। এই শোক সইতে না পেরে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান তিনি।
মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার বাগোয়ান ইউনিয়নের আনন্দবাস দক্ষিণ পাড়ার মৃত জহর বিশ্বাস এর ছেলে জামাত আলী।
গত ৩ ফেব্রুয়ারি একটি তালিকা প্রকাশ করে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) বিধি অনুযায়ী মুজিবনগর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা যাচাইবাছাই কমিটি। যেখানে জামাত আলীসহ ২৭ জনের নাম বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে।
আরো পড়ুন: সিলেটে এনা পরিবহন ও লন্ডন এক্সপ্রেসের সংঘর্ষে ১১ জন নিহত
জামাত আলীর ছেলে রশিদুল ইসলাম সংবাদ মাধ্যমকে জানান, তালিকায় নাম বাদ পড়ার পর থেকেই তার বাবা টেনশনে ভুগতে থাকেন। মুক্তিযোদ্ধা হয়েও সাক্ষী জোগাড় করতে না পারায় নাম বাতিল হওয়ায় দুশ্চিন্তায় তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। পরে গত বুধবার তিনি মৃত্যুবরণ করেন। অবশ্য রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার মরদেহ দাফন করা হয়েছে।
রশিদুল ইসলাম আরো বলেন, ‘আমার আব্বার সঙ্গে যারা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন তারা মারা গেছেন। আমার আব্বার কাগজপত্র সবই ঠিক আছে। কিন্তু সাক্ষী না থাকায় আমার আব্বাকে যাচাইবাছাই কমিটি মুক্তিযোদ্ধা তালিকা থেকে বাদ দেয়। সেই শোক তিনি সহ্য করতে না পেরে কয়েকদিন ধরে টেনশন করতে করতে স্ট্রোক করে মারা যান। এতদিন বাদে জামুকা হঠাৎ করে নতুন আইন-কানুন, নিয়ম-বিধি তৈরি করে মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই বাছাই করছে। এতে কতজনকে শেষ বয়সে এসে দুশ্চিন্তা আর টেনশনে পড়তে হচ্ছে। হার্ট আ্যাটাকের ঝুঁকিতে পড়তে হবে যাদের তার দায় দায়িত্ব কি জামুকা নেবে?’
আরো পড়ুন: বগুড়ায় বাসের ধাক্কায় অটোরিকশার ৪ যাত্রী নিহত
জামাত আলীর মেয়ে ফুলেশরী সংবাদ মাধ্যমকে জানান, ‘যাচাইবাছায়ে বীর মুক্তিযোদ্ধার তালিকা থেকে আমার আব্বার নাম বাদ যায়। ভাতার টাকা উঠাতে গিয়ে তুলতে না পেরে তার টেনশনে আরও বেড়ে যায়।’
জামাত আলীর স্ত্রী মহিলা খাতুন সংবাদমাধ্যমকে জানান, ‘আমার স্বামীকে টেনশন করতে ডাক্তার নিষেধ করেছিলেন। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা তালিকা থেকে নাম বাদ যাওয়ায় আমরা অনেক বোঝানোর পরও তার দুশ্চিন্তা আর টেনশন কমাতে পারিনি। তিনি সব সময় টেনশন করতেন। টেনশন করতে করতে বুধবার ভোর রাতে তিনি স্ট্রোক করে মারা যান।’
মুজিবনগর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা যাচাইবাছাই কমিটির সদস্য সচিব ও মুজিবনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুজন সরকারের কাছে এ বিষয় জানতে চাইলে তিনি সংবাদ মাধ্যমকেবলেন, ‘জামাত আলীর বিষয়ে সিদ্ধান্তটি কমিটির সিদ্ধান্ত, রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত নয়। রাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, তিনি বেসামরিক গেজেটভুক্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা। আমরা বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সম্মান করে তাকে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা দিয়েছি। তবে উপজেলা কমিটি নাম বাতিল করলেও এটা চূড়ান্ত না। যারা বাতিল হয়েছেন, তারাও আপাতত সম্মানি ভাতা পাবেন। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা জামাত আলীর অ্যাকাউন্টে কোনও কারণে হয়তো ভাতার টাকা এসে পৌঁছায়নি। তবে অল্প সময়ের মধ্যে এসে যাবে। এছাড়াও যারা বাদ পড়েছে তাদের আপিল করারও সুযোগ আছে।’