তালেবান আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের সহযোগী দেশগুলোর কর্মীরা রাজধানী ছাড়তে শুরু করলেও চীন, রাশিয়া ও ইরান ইঙ্গিত দিয়েছে যে, তাদের দূতাবাস বন্ধ করার কোন পরিকল্পনা নেই।
চীন
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এএফপিকে বলেছেন, বেইজিং আফগানিস্তানের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক গড়ে তোলার সুযোগকে স্বাগত জানায়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা আফগানিস্তানের ক্ষেত্রে ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার’ নীতি নেবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই মুখপাত্র আরও বলেছেন, ‘তালেবানরা বারবার চীনের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার আশা প্রকাশ করেছে এবং তারা আফগানিস্তানের পুনর্গঠন ও উন্নয়নে চীনের অংশগ্রহণের অপেক্ষায় আছে। আমরাও তাদের এমন ইচ্ছাকে স্বাগত জানাই।’
তালেবানের একটি প্রতিনিধিদল গত জুলাইয়ে চীন সফর করেন। ওই সফরের তালেবান নেতারা চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং লির সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সেই সময় ওই বৈঠককে রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে তালেবানের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি বলে মনে করা হচ্ছিল।
চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হুয়া চুনইং সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, আফগান জনগণের ‘ইচ্ছা ও পছন্দকে’ চীন সম্মান করে। চীনা মুখপাত্র বলেন, ‘চীন সবসময় আফগানিস্তানের সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা এবং ভৌগলিক অখণ্ডতাকে মর্যাদা দিয়েছে।’
ওদিকে আফগানিস্তানে চলতি ঘটনাপ্রবাহকে চীনের পত্রপত্রিকায় মূলত যুক্তরাষ্ট্রের অপমানজনক পরাজয় এবং ব্যর্থতা হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে। গ্লোবাল টাইমস লিখেছে, আফগানিস্তানে মুহূর্তের মধ্যে ক্ষমতার যে রদবদল তা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ‘বিশাল একটি আঘাত।’
রাশিয়া
এদিকে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রোববার বলেছে, তাদের আফগানিস্তান ছাড়ার কোনো পরিকল্পনা নেই। মস্কো বলছে, তালেবানদের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলার ব্যাপারে তারা আশাবাদী। তবে তালেবানকে শাসক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার কোন তাড়া আপাতত নেই।
প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিশেষ প্রতিনিধি কাবুলে রুশ দূতাবাসের মাধ্যমে তালেবান নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। আফগান সরকারের পতন ও রাজধানী কাবুল তালেবানের হাতে চলে যাওয়ার পরদিন রাশিয়ার পক্ষ থেকে এমন কথা জানানো হয়েছে।
ভ্লাদিমির পুতিনের বিশেষ প্রতিনিধি জমির কাবুলভ টেলিফোনে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘তারা কাবুলের সাথে কথা বলছে। এই মুহূর্তে সেখানে সব রকম যোগাযোগ করা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে কাবুলে রাশিয়ার দূতাবাস।’
তালেবান কাবুলের দখল নেওয়ার পরই তালেবান বিদ্রোহীরা কাবুলে রুশ দূতাবাসে নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন করার মধ্য দিয়ে আলোচনা শুরু হয়। কাবুলভ বলেন, ‘শান্তভাবে এবং কোনো অঘটন ছাড়াই তারা (তালেবান) এসে এটি (দূতাবাস) তাদের পাহারায় নিয়েছে।’
পুতিনের বিশেষ প্রতিনিধি জমির কাবুলভ রয়টার্সকে বলেন, ‘আমাদের দূতাবাস কর্তৃপক্ষ আমাদের দূতাবাসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার একটি স্থায়ী প্রক্রিয়া তৈরির জন্য তালেবানের শীর্ষ নেতৃত্বের দ্বারা বিশেষভাবে নিযুক্ত প্রতিনিধিদের সাথে যোগাযোগ রাখবে।’
ইরান
এদিকে তালেবানের কাবুল দখল আর আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনির দেশত্যাগের পর ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি বলেছেন, আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের ‘সামরিক ব্যর্থতা’ দেশটিতে স্থায়ীভাবে শান্তি প্রতিষ্ঠার এক সুবর্ণ সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে।
দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশনে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী ইরানের প্রেসিডেন্ট বলেছেন ‘আমেরিকার সামরিক পরাজয় এবং সৈন্য প্রত্যাহার অবশ্যই আফগানিস্তানের জনমানুষের জীবন, নিরাপত্তা এবং টেকসই শান্তি পুনরুদ্ধারের একটি সুযোগ হয়ে উঠবে।’
ইরান ‘আফগানিস্তানের ঘটনাবলী ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছে’ জানিয়ে রাইসি বলেন ইরান দেশটির সঙ্গে ভালো প্রতিবেশীর সম্পর্ক চায়। আফগানিস্তান পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জারিফ ও সুপ্রিম ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলকে দায়িত্ব দিয়েছেন তিনি।