মর্যাদার দিক থেকে সৃষ্টি জগতে মানুষই সেরা। এদের মধ্যে যারা আল্লাহর বিধান যথাযথভাবে পালন করেন তারা দুনিয়া ও পরকালে সফল। কিন্তু এমন কিছু মানুষ আছে যারা আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগি করার পরও কিছু ভুল বা অন্যায়ের কারণে তাদের আমলনামায় থাকা পর্বত সমান নেকগুলো কোনো কাজে আসবে না বলে সতর্ক করেছেন বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। সেসব লোক কারা? কী তাদের অন্যায়?
প্রকাশ্যে ভালো কাজ তথা ইবাদত-বন্দেগির বিনিময়ে মহান আল্লাহ তাআলা বান্দাকে অনেক নেক দান করবেন। বড় বড় পর্বত সমান নেকও সামান্য ভুল তথা অন্যায়ের কারণে কোনো কাজে আসবে না। হাদিসে বর্ণনায় তাদের সুস্পষ্ট বিবরণ ওঠে এসেছে-
হজরত সাওবান রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, অবশ্যই আমি আমার উম্মাতের কয়েকটি দল সম্পর্কে জানি, যারা কেয়ামতের দিন তিহামার শুভ্র পর্বতমালার সমতুল্য নেক আমল নিয়ে উপস্থিত হবে। কিন্তু মহান আল্লাহ তাআলা সেগুলোকে বিক্ষিপ্ত ধূলিকণায় পরিণত করে দেবেন।
(এ কথা শুনে) হজরত সাওবান রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! তাদের পরিচয় পরিস্কারভাবে আমাদের কাছে বর্ণনা করুন; যাতে আমরা যেন নিজেদের অজান্তে তাদের দলভূক্ত হয়ে না যাই।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন-
- ‘তারা তোমাদেরই ভাই; তোমাদের সম্প্রদায়ের অন্তর্ভূক্ত।
- তোমাদের সঙ্গেই (একই সমাজে) বসবাস করে।
- তারা রাতের বেলা তোমাদের মতই (আল্লাহর) ইবাদত করে।
কিন্তু তারা এমন লোক যে-
‘একান্ত গোপনে আল্লাহর হারামকৃত বিষয়ে লিপ্ত হয়।’ (ইবনে মাজাহ)
হারাম কাজগুলো কী হতে পারে?
কুরআনুল কারিমের ঘোষণা- ‘নিশ্চয়ই শয়তান মানুষের প্রকাশ্য দুশমন।’ এ শয়তানের প্ররোচনায় মানুষ অনেক সময় আল্লাহ তাআলা কর্তৃক হারাম ঘোষিত কাজও করে থাকে। অথচ তারা সমাজে সবার সঙ্গে আল্লাহর সব বিধান মেনে চলা ব্যক্তি। কিন্তু গোপনে সুযোগ পেলেই-
- দৃষ্টির খেয়ানত করে। সামনাসামনি কারো দিকে না তাকালেও পেছনে কিংবা লুকিয়ে এ কাজটি করে থাকে।
- লজ্জাস্থানের খেয়ানত করে। সবার সামনে অনেক পরহেজগার কিন্তু লোক চোখের অন্তরালে চারিত্রিক কুলষতায় জড়িয়ে পড়ে।
- মানুষের অধিকার নষ্ট করে। গোপনে মানুষ ধন-সম্পদ, জমা-জমি ও ফল-ফসলের ক্ষতি করে।
- নির্জনে ইচ্ছা-অনিচ্ছায় জানা-অজানা হারাম অনেক কাজে নিয়োজিত হয়।
প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ হাদিসে মানুষের গোপন সেসব অন্যায় অপরাধের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করার কথা বলেছেন। যেন তাদের এসব অন্যায় অপরাধের কারণে দুনিয়ার জীবনের সব নেক আমলগুলো পরকালে ধূলিকনায় পরিণত না হয়।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে হাদিসের ওপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। গোপনে হারাম কাজে জড়িত হওয়া থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।